অভি পুরান ঢাকার একটি বাড়িতে ভাড়ায়
থাকে। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ
জেলার বাজিতপুর উপজেলায়। সে ঢাকার
একটি প্রাইভেট কলেজে পড়ালেখা করে।
অভির বাসার সিড়ি দিয়ে নামার পরে দুই -
একটা সরু গলি পার হয়ে মেইন রাস্তায়
আসতে হয়।
এইসব সরু গলি আর চিপা-চাপা রাস্তা হল
পুরান ঢাকার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
প্রতিদিনের মত অভি আজ ও তাড়াতাড়ি
করে সিড়ি দিয়ে নামছিলো। যদিও অভির
কলেজের এখনো অনেক দেরী, তবুও সে
যেই সিড়ি থেকে নামল এমনি অভি দেখতে
পেল যে গলির শেষ মাথায় আজ একটা মেয়ে
দাড়িয়ে আছে। অভি এমনিতেই খুব লাজুক
স্বভাবের ছেলে। সামনে একটা মেয়েকে দেখে
কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। অনেক
কষ্ঠে ঐ মেয়েকে পাশ কাটিয়ে সামনের দিকে
এগুলো। গলির এই মাথা থেকে ঐ মাথা
পর্যন্ত যেতেই তার কাপড় চোপড় সব
ভিজে গেল ঘামে। আরেকটু সামনে এগিয়ে
যখন অভি পিছনের তাকাল- তখন ঐ মেয়েটি
তাকে এমন করে মুখে একটা ভ্যাংচি কাটল
যে তা দেখে অভির মাথা ঘুড়ে পড়ে যাবার দশা
হল।
পরের দিন আবারো অভি সেই মেয়েটির
খপ্পরে পড়ল। তবে আজ সে মেয়েটিকে
একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করল। বয়স মনে
হল ১৬-১৭ হবে। উচ্চতা ৫ ফিট ২ ইঞ্চির
মত হবে। মেয়েটি দেখতে অনেক চিকন তাই
আরো বেশি লম্বা মনে হয়। গায়ের রং কিছুটা
কালচে ধরনের। তবে সবচেয়ে বড় কথা হল-
মেয়েটার মুখটা এত বেশি মায়াবী যে একবার
দেখলে যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে। মোটকথা,
মেয়েটি কালচে বর্ণের হলে সবকিছু মিলিয়ে
ওর মত মেয়ে খুজে পাওয়া অনেক কঠিন
ব্যাপার।
অভি সামনে এগুতেই মেয়েটি আজ ও তাকে
ভ্যাংচি কাটল। তবে আজ অভির সামনা
সামনি ই ভ্যাংচি কাটল।
অভি ঐদিন ও কিছু না বলে কলেজে চলে
গেল।
কলেজ থেকে ফিরে সে এলাকার একটা ছোট
বোনকে পাটাল ঐ মেয়ের বাসার, বাসায় কে
কে আছে, ঐ মেয়ে কি করে, এসব কিছুর
খোজঁ নিতে।
দুই একদিন পরে অভি জানতে পারল যে- ঐ
মেয়েটির নাম তমা। নতুন ভাড়াটিয়া ওরা।
আর মেয়েটির পরিবারে শুধু তার বাবা আর মা
আছে। গত বছর খালা বাড়িতে যাওয়ার সময়
রোড এক্সিডেন্টে মেয়েটার ভাই আর ছোট
একটা বোন মারা গেছে। ভাই আর বোনকে
হারিয়ে মেয়েটি কিছুটা মানসিক
প্রতিবন্ধীদের মত হয়ে গেছে। যখন যা মন
চায় তাই করে। অনেক সময় অপরিচিত
মানুষের সাথেও পরিচিতদের মত ব্যাবহার
করে। এইবার অভি বুঝতে পারল ঐ মেয়ের
ভ্যাংচি কাটার আসল কারন।
ঐ মেয়েটিকে প্রতিবন্ধু ভেবে অভি সেই
চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিল। পরের দিন অভি
আবারো সেই পরিচিত ভ্যাংচির সম্মুখীন
হল। অভি এইবার ভাবল- নাহ! এইভাবে আর
চলতে পারে না। তাই অভি মেয়েটির দিকে
এগিয়ে গেল। অভিকে এগুতে দেখে মেয়েটি
ভয়ে একদম কাঠ হয়ে গেল। এই যে ভ্যাংচি
রানী, আমাকে ভ্যাংচি না কাটলে হয় না।
(অভি)
মেয়েটি নিরুত্তরভাবে অভির মুখের দিক
তাকিয়ে রইল। এইবার অভি একটু ধমকের
সুরেই বলল- কি হল? কথা কানে যাচ্ছে না
নাকি??
অভির ধমক খেয়ে মেয়েটি এইবার কান্না শুরু
করল।
আরেহ, এতো দেখছি বাচ্ছা মেয়ের মত
কান্না শুরু করে দিল। অভি বলল- আমি
কান্না করার মত কি বললাম। আরো কি যেন
বলতে চাচ্ছিল অভি। কিন্তু এর আগেই
মেয়েটি দৌড়ে চলে গেল।
সেদিন আর অভির কলেজে যাওয়া হল না।
বাসায় ফিরে এসে ভাবতে লাগল- নাহ!
মেয়েটিকে এভাবে ধমকানো ঠিক হয় নি।
একটা অসুস্থ মেয়েকে এভাবে না ধমকালেও
চলত। এসব কিছু ভাবার সাথে সাথেই সে
মেয়েটিকে স্যরি বলার জন্য তমার বাসায়
চলে গেল। বাসায় গিয়ে দেখল তমার মা বসে
আছে। সে সালাম দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল।
কিভাবে তমার কথা বলবে অভি কিছুই বুঝতে
পারছিল না।
>তবুও সে বলল- আন্টি তমা কোথায়??
> তমা কে তুমি চিনো কি করে বাবা? অভি
তমার মাকে সবকিছু খুলে বলল। সব শুনার
পরে তমার মাও কিছুটা কান্নার সুরে বলল-
জানো বাবা, এই গত এক বছরে এই
প্রথমবারের মত আমার মেয়েটিকে কান্না
করতে দেখেছি আজ। ওর ভাইবোন মারা
যাবার পর থেকে তো ও কান্না করা একদম
ভুলেই গিয়েছিল। আজ যখন দেখলাম তমা
কান্না করতে করতে বাসায় ঢুকল তখন আমি
দুনিয়ার সবার থেকে বেশি খুশি হয়েছিলাম।
কারন - আমার মেয়ে আস্তে আস্তে
স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে। এইকথা
বলে তমার মা অভিকে তমার রুমে নিয়ে গেল।
অভি রুমে ঢুকেই দেখল তমা এখনো কাদঁছে।
>তমা, দেখ কে এসেছে??
তমার মায়ের ডাকে সে চোখ তুলে তাকালো।
কেদেঁ চোখদুটো একদম লাল টকটকে
বানিয়ে ফেলেছে।
তমাকে উঠতে দেখেই তমার মা অভির জন্য
চা আনতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।
>আমি আসলে বুঝতে পারিনি তুমি আমার
ধমকে এতটা কষ্ট পাবে। তোমাকে কষ্ট
দেওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না।
(অভি)
> আমি কারো কথাতেই কোনো কষ্ট
পেতাম না। কিন্তু তুমি যখন আমায় ধমকালে
তখন মনে হল আমার আপন কেউ আমাকে
ধমকাচ্ছে। (তমা)
এইকথা বলেই তমা আরো জোরে কাদাঁ শুরু
করল। তমাকে স্বান্তনা দেওয়ার জন্যে
নিজের অজান্তেই অভি তমাকে জরিয়ে
ধরল। অভির স্পর্শ পেয়ে তমাও অভির বুকে
মাথা রেখে একদম অভির সাথে মিশে গেল।
ঐদিন তমার কান্না থামিয়ে বাসায় ফেরার পর
অভি তমাকে নিয়ে নতুন
করে ভাবতে শুরু করল। অভির চিন্তা-
ধারাগুলি এই রকম ছিল- হোক না তমা
মানসিক ভাবে অসুস্থ, তাতে তো দোষের
কিছু নেই। বরং অভির ভালোবাসার দ্বারা
যদি তমাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা
যায় সেটাই হবে অভির জীবনের সব থেকে বড়
পাওয়া। তাই অভি ভাবল - তমাকেই সে সারা
জীবন আগলে রাখবে।
.
২ বছর পরে....
তমা আজ সম্পুর্ন সুস্থ একমাত্র অভির
কারনে। আজ বিকালে তমাকে নিয়ে অভির
ঘুরতে বেরুনোর কথা। যখন দেখল যে- তমা
একটা নীল শাড়ি পড়ে তার দিকে এগিয়ে
আসছে তখন অভি তমাকে দেখে বিমোহিত
হয়ে গেল। মনে মনে সে বিধাতাকে ধন্যবাদ
জানাল তমাকে তার জীবনে এনে দেয়ার
জন্য।
নাহ! অভি জীবন সঙ্গীনি নির্বাচন করতে
একদম ভুল করে নি। তমার মত মেয়েকে
জীবনসঙ্গী হিসাবে পেয়ে আজ অভির
নিজেরই নিজের প্রতি গর্ববোধ হয়।
By: Bipul Hasan
No comments:
Post a Comment