-এখন ও ঘুমাচ্ছ তুমি? তারাতারি ঘুম থেকে উঠে পড়। নাহলে কিন্তু বউ এর ঝাড়ি শুনতে হবে।
এপাশ থেকে এই ধরনের উপদেশ দিয়ে ফোনটা কেটে দিল।
.
আজ কয়েকদিন কায়েসের ফোনে এই ধরনের ফোন আসছে।ঘুম থেকে না উঠলে আবার কিছুক্ষন পরে ফোন দিয়ে বলছে
-তুমি এখন ই উঠবে। এত আলসামি ভাল না।
.
চাকরি না পেয়ে আর পকেটে টাকা না থাকায় কায়েস কিছুদিন দুশ্চিন্তায় ভুগছে। সারারাত ঘুমাতে না পেরে সকালে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু এই মেয়েটা ফোন দিয়ে কায়েসের ঘুমের বারোটা বাজাচ্ছে।
মেজাজ খারাপ হলেও কিছু বলতে পারছে না।মাঝে মাঝে ফোন বন্ধ করে রাখছে কিন্তু তাতেও কোন লাভ হচ্ছে না।
কায়েস হোটেলে বসে খাবার খাচ্ছিল। হঠাৎ তার ফোনে ১০০০ টাকা আসলো।কায়েসের এই সময় টাকার দরকার ছিল। তাই কে পাঠিয়েছে সেটা দেখার দরকার নেই।
.
প্রতিদিনের মত আজও কায়েসের ফোনে ফোন আসলো। কায়েস আগে থেকেই ঘুম থেকে উঠেছে। তাই ফোন ধরে কায়েস বলল
-হ্যালো কে আপনি?
-সেটা কি জানা খুব দরকার?
-আপনি আমাকে এত জালাচ্ছেন কেন?আমি বেকার একজন মানুষ। চাকরি পাচ্ছি না।বড় কষ্টে আছি। দয়া করে আমাকে মুক্তি দিন।
-তোমার কষ্টগুলোর ভাগ আমাকে দাও।
-কালকে আপনি কি আমার নাম্বারে টাকা পাঠিয়েছেন?
-কোই নাতো?
-আমি জানি আপনি পাঠিয়েছেন। আমি আপনার টাকা পাঠিয়ে দেব।
-তোমাকে কি টাকা দিতে বলেছি? শুধু আমাকে ভালবাসলেই হবে।
-আপনি কি টাকা দেখিয়ে ভালবাসতে বলছেন?
-সেটা বলছি না।
-শোনেন আমি অনেক মানসিক অশান্তির মধ্যে আছি।যখন তখন ফোন দিয়ে আমাকে জালাবেন না।
-তুমি বিরক্ত হও?
-হ্যা। হই। আর আমাকে ফোন দিবেন না।
-রেগে যাচ্ছ কেন?
-রেগে যাব না তো কি? আমাকে রেহাই দিন।
কায়েস সস্তির নিশ্বাস ফেলল। কায়েস তার সবকিছু মেয়েটিকে বলেছে। কিন্তু মেয়েটি শুধু তার নাম বলেছে। মেয়েটির নাম অবনি।
.
আজকে আর মেয়েটি ফোন করে নি। ফোন না আশায় কায়েস শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। শান্তিতে ঘুমালেও কোন একটা জিনিস কে মিস করছে। ঘুম থেকে উঠে আজ মোবাইল হাতে নিয়ে মেয়েটির মেসেজ অথবা ফোন এসেছে নাকি খুজছে।
.
দুপুর হয়ে গেছে তবুও কায়েসের খেতে ইচ্ছে করছে না। কিছুই ভাল লাগছে না। বাধ্য হয়ে কায়েস মেয়েটির নাম্বারে কল দিল। অনেকবার চেষ্টা করার পরেও ফোন ধরছে না।
.
অনেক্ষন পরে একজন ফোন ধরে বলল
-কে?
-আমি কায়েস।
-ও। তুমি কায়েস!!! তুমি কোথায়?
-আমি কোথায় সেটা বলছি। আন্টি অবনি কে দেন।
-.....
-কি হল কাঁদছেন কেন?
-অবনি হাসপাতালে
-কি বলছেন?কি হয়েছে?
-অবনি হাসপাতালে। খুব খারাপ অবস্থা।
-কি হয়েছে।
-অবনি অনেকদিন ধরে অসুস্থ। ঔষধ খাওয়ার পরে কিছুটা সুস্থ হয়েছিল। কিন্তু কাল থেকে ঔষধ না খাওয়ায় আবার অসুখ বেড়ে গেছে।
-কিন্তু আপনারা আমার সম্পর্কে জানলেন কিভাবে?
-অবনির একটা কাল্পনিক জগত আছে। আর সেখানে আবনি তার কল্পনা নিয়ে থাকে। কল্পনা আর বস্তব মিলিয়ে তার জিবন। অবনির সাথে কেউ খারাপ ব্যাবহার করলে অবনি সেটা মানতে পারে না।
-এখন কোন হাসপাতালে আছে?
-স্কয়ার হাসপাতাল।
-আচ্ছা আমি আসছি।
ফোন কেটে দিয়ে কায়েস টাকা খুঁজতে থাকলো। অনেক খোঁজার পরে টাকা না পেয়ে অবনির দেয়া টাকার কথা মনে পরলো।
.
অবনির দেওয়া টাকাগুলো নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দিল। গাড়িতে বসে কায়েসের শরির ঘামছে। সে কি করেছে? অবনির অবস্থার জন্য কায়েস নিজেকেই দায়ি মনে হচ্ছে।
.
অনেক্ষন পরে কায়েস স্কয়ার হাসপাতালে পৌছাল। কিন্তু কায়েস অবনির বাবা মা কাউকেই চেনে না। তাই আবার কায়েস ফোন করে জেনে নিল কোথায় আছে?
.
একটু আগে অবনির জ্ঞ্যান ফিরেছে। অবনির বাবা মা তার পাশে বসে আছে। কায়েস রুমের ভেতরে ঢুকে অবনির চেয়ে দুরে দাড়িয়ে আছে।
.
অবনির বাবা কায়েসকে ডাকলো। কায়েস অবনির পাশে গিয়ে বসলো। অবনি কায়েসের দিকে তাকিয়ে আছে। অবনির বাবা বলল
-ওকে চিনতে পারছিস না মা?
-কে?
-কায়েস।
.
কায়েস বলল
-আমার সাথে কথা বলবে না?
-.......
-আমার প্রতিদিন ঘুম ভাঙানোর দায়িত্ব নিবে?
-কেন?
-কারন আমি ঘুম থেকে উঠতে দেরি করি।আমার বউ হয়ে প্রতিদিন আমার ঘুম ভাঙাবে?
-আমি তো সেটাই চাই।
-কিন্তু আমার মত চালচুলোহিন ছেলের বউ হয়ে কি করবে?দুশ্চিন্তায় এমনিতেই ঘুম ভাঙে না। তাহলে কিভাবে ঘুম ভাঙাবে?
-তুমি নাহয় হয় আমাকে জড়িয়ে ঘুমাবে আর তোমার দুঃখগুলো আমায় দিবে।
-তাহলে তোমাকে নিয়ে ভালই থাকবো।
.
অবনি তার বাবাকে বলল
-আচ্ছা বাবা। তুমি তো বলেছিলে আমি যদি কোনদিন কিছু চাই তাহলে দিবে।
-হ্যা বল মা দেব।
-আমি যদি তোমার সব সম্পদ চাই দেবে তো?
-হ্যা। সব তো তোরই।
-তাহলে আমি আমার কোম্পানিতে আমার স্বামিকে চাকরি দেব। তুমি দেবে চাকরি?
-তাহলে তো তোর স্বামিকে আগে তোর মালিকানা নিতে হবে।
.
কায়েস বলল
-তাহলে আগে আমি আপনার মেয়ের মনের মালিকানা চাই। আর যেটা সারাজিবনের জন্য চাই।......
.
By :পাবনার তাঁরছেড়া বালক
No comments:
Post a Comment