মহিলা হোস্টেলের ভূত
-----------------------
২০০৩ কি চারের ঘটনা। তখন আমি চট্টগ্রাম থাকি। পুরান চান্দগাঁও থানার ওখানে বাসা। কি একটা কাজে চান্দগাঁও আবাসিক গিয়েছিলাম। যখন ফিরছিলাম তখন ঘড়িতে রাত ১১ টা বেজে পনের। হঠাৎ খেয়াল চেপে বসলো আজ হেঁটেই বাসায় যাই। রিক্সা নিলাম না আর। মেইনরোড ধরে না গিয়ে আবাসিকের ভিতর দিয়ে ঘুর পথে যাওয়া শুরু করলাম।
এ ব্লকে মহিলা হোস্টেলের সামনে দিয়ে হেঁটে হেঁটে ১৩ নং রোডে ঢুকে পরলাম। নির্জন রাস্তা। শীতের রাত বলে কুয়াশা ঢাকা। আশে-পাশের বাড়ির বারান্দার লাইটের আলো রাস্তায় এসে উপচে পরে কুয়াশা কে আরো জমিয়ে দিয়েছে। হাঁটছি আপন মনে। কনকনে শীতে বেশ ভালোই লাগছিল হাঁটতে। একটু পর পর সিগারেটে টান দিচ্ছি। হঠাৎ আমার পাশ দিয়ে কি যেনো দ্রুত বেগে চলে গেল। চমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। অস্ফুটস্বরে মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল- "ভূত নাকি?"
এই বলে আবার সামনে - পিছনে তাকালাম। কিছুই দেখতে পেলাম না। বুকে ফুঁ দিয়ে হাঁটা শুরু করবো এমন সময়-ই কে যেনো বলে উঠলো- "হ! ভাইজান। আমি ভূত!"
- কে? কে?
- ভাইজান আমি। একটু সামনে আগায়া আসেন।
দেখি একটু সামনেই রাস্তার পাশের ডাব গাছের নিচে লিকলিকে শরীরে কে একটা যেন দাঁড়িয়ে আছে।
- কে? কে?
- ভাইজান কইলাম-ই তো আমি ভূত।
একটু সাহস নিয়ে সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম। দেখি অসহায় চেহারায় ডাগর ডাগর চোখে লিকলিকে শরীরের চার ফুটের মতো লম্বা একটা ভূত আমার সামনে। মুখে পাইরেটস অব ক্যারিয়ানের জনি ডেপের মতো বিনি করা দাড়ি। পরনে কেবল একটা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। তবে কোমরের মাপে ভুল আছে। পাটের দড়ি কোমড়ে শক্ত করে এঁটে বসে মান ইজ্জৎ টিকিয়ে রেখেছে। জীবনে এই প্রথম ভূত দেখলাম। ভয় লাগলো না একটুও। বরং ভূতটাকে দেখে ওর অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হল। দেখলেই যেন বলতে ইচ্ছে করে- "বাবা খাইছো কিছু।" গায়ের রং হালকা নীলচে।
- কিরে হারামজাদা এখনো লুকাই আছিস ক্যান? সামনে আয়।
- লুকামু আর কই। আমাগো কি আর লুকানোর জায়গা আছে। সবতো আপনাগো ডেভলাপাররা দখল কইরা ফেলছে। কন কি কইবেন?
- আচ্ছা আমি তো শুনছিলাম ভূতেরা নাঁকি সুরে কথা বলে কিন্তু তুই তো দেখি আমাদের মতোই কথা বলিস। ব্যাপার কি রে?
- ভাইজান মাইন্ডে লইয়েন না একটা কথা কই। এই আকামডা করছে আপনেগো সাহিত্যিকেরা। হুদাই আমাগো নামে মিথ্যা অপবাদ দিছে আমরা কিনা নাঁকি সুরে কথা কই। ইচ্ছা করে থাবড়ায়া ওগো...
- হারামজাদা থাম। বাচাল ভূত কোথাকার। এখন বল এমন জোরে দৌড় দিয়া কই যাইতেছিলি? আমারে তো পুরা ভয় লাগাই দিছিলি।
ভূত একটু এগাই এসে দু'হাত দিয়ে প্যান্ট একটু উপরে তুলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আমি আরেকটা সিগারেট ধরালাম।
- ভা-ই-জা-ন আর কইয়েন না। এই যে আবার মনে করায় দিলেন। দেহেন আমার হার্টবিট আবার বাইরা গ্যাছে।
- কি কইলি? তোর আবার হার্টবিট...
- কেন ভাইজান, ভূত বইল্লা কি আমাদের হৃদয় থাকতে পারেনা।
- আচ্ছা থাক বাদ দে। বল কেন দৌড় দিছিলি?
- ভয়ে দৌড় দিছিলাম।
- ভয়! ভূতরাও কি ভয় পায় রে। কিসের ভয়?
- বলা যাবে না। ভূত হইলেও আমারও তো আত্মসম্মানবোধ আছে নাকি।
- হারামজাদা তুই ভালোই পটর পটর করতে পারিস। বললে বল না হলে ভাগ।
- Just cool ভাইজান Just cool কইতাছি। বিড়িটা একটু দিবেন। একটা টান দেই।
- উরে সাংঘাতিক তুই বিড়িও খাইস।
- সব সময় খাইনা ভাইজান। মানুষিক চাপে থাকলে খাই।
- তোর আবার মানুষিক চাপ! কাম সারছে। নে ধর টান দে। এবার কাহিনী বল?
ভূতটা ডাবগাছের নিচে দু'পা ছড়িয়ে বসে গাছে হেলান দিয়ে সিগারেটে একটা লম্বা টান দিলো। এই মুহুর্ত ভূতটাকে দেখে কেমন যেন উদাস উদাস মনে হচ্ছে।
- আমি ভাইজান একটু ঘুরতে বাইর হইছিলাম। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ ছোট বাথরুম পাইলো। আমি কিন্তু ভাই আপনাগো মতো গাছতলা, দেয়াল, খাম্বা পাইলেই ছাইড়া দেই না। টয়লেট ছাড়া আমি পি করতে পারি না।
ভূতের কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। তবে ভূতের কথা শুনে লজ্জায় মাথাটা একটু কাঁটাও গেল।
- তো বাথরুম চাপাইয়া হাঁটতেছি। সামনে দেখি কর্মজীবি মহিলা হোস্টেল। ঢুইক্কা গেলাম ভিতরে। ঝকঝকে কমোড দেইখা পি করলাম। আমি আবার কমোড পরিষ্কার না থাকলে ব্যবহার করি না। তো পি কইরা বাইর হইতে যামু ঠিক ঐ সময় একটা সুন্দর্য কইরা মাইয়্যা টয়লেটে ঢুকার লাইগ্যা দরজাটা খুলতেই আমারে দেইখা ভূত-ভূত-ভূত বইলা যে চিৎকুর ডা দিলো ভাইজান। ঐ মাইয়্যার চিৎকুরের ঠেলায় ভয়ে আমার হার্টবিট এক্কেবারে একশ একশ। জান বাঁচানো ফরজ ভাইজান। জানডা কোন রকমে হাতে লইয়া আইজও দৌড় কাইলও দৌড়। তারপরেই তো আপনার লগে দেখা।
- বিলাইর হাড্ডি তুই পেশাব করার জন্য মহিলা হোস্টেলে গেছিস। তোর...
- ভাইজান থামেন। জানি কি কইবেন। আমার মা বইন আছে কি-না জিগাইবেন তো। আছে সবাই আছে। আমাগো মা বইন অনেক ভদ্র। শিষ্টাচার জানে। আপনাগো মা বইনের মতো রাত বিরাতে অতিথি মেহমান দেইখা চিল্লায়া কানের পর্দা ফাটায় দেয় না। হার্টবিট বাড়ায় দেয় না।
- হারামজাদা তুই অতিথি হইয়্যা মহিলা হোস্টেলে গেছিলি।
ভূত হঠাৎ সিগারেট ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ভয়ে পানসে হয়ে গেছে মুখ। তাকিয়ে আছে অপলক আমার পাশে। আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকাতেই দেখি এক মহিলা ভূত কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বলে দিতে হলোনা চেহারা দেখেই বুঝতে পারছি এইটা ভূতের মা। মা ছেলের কি মিল।
মহিলা ভূত ছেলের দিকে এগিয়ে গিয়ে কানের নিচে বিরাশি সিক্কার এক চড় কষালো। লিকলিকে ভূতটা ডাব গাছের সাথে সজোরে বারি খেয়ে স্প্রিং এর মতো দুলতে দুলতে সোজা হয়ে গেল।
- হারামজাদা তোরে পুরা আবাসিক খুঁজতাছি তুই এইখানে এই বদের মানুষের সাথে বিড়ি টানিস। তোর বিড়ি খাওয়া ছুটাইতেছি।
মহিলা ভূতের চিৎকারে আমার কানে তালা লেগে যাওয়ার যোগার। অস্ফুটস্বরে বললাম- "শিষ্টাচার হ্যাঁ শিষ্টাচার। "
আমার কথা শুনে লিকলিকে ভূতের চোয়াল ঝুলে গেল। ওর মায়ের দিকে রাগ এবং অভিমানি দৃষ্টিতে তাকালো। যেন বলতে চাইছে- "দিলা তো ইজ্জতের চল্লিশা কইরা।"
- আইজ তোর বাপে আসুক তোরে মহিলা হোস্টেলের পাশে ঘুরঘুর করা ছুটামু। কাইল তোর IELTS পরীক্ষা আর তুই ঘুরঘুর করিস।
- মাম্মি, পড়তে পড়তে মাথা হ্যাং করছে বইলাই তো ঘুরতে বাইর হইছি।
- লন্ডনে কোন ভার্সিটিতে যদি চাঞ্চ না পাইস তোরে রিক্সা কিন্না দিমু।
মা ছেলের কথা শুনে পুরো তাজ্জব হয়ে যাচ্ছি। কি বলছে এরা। ভূতরা কি পড়ালেখা করে। তাও আবার লন্ডনে পড়তে যাওয়ার জন্য IELTS ও দেয়। কি বলে এইসব। পুরাই ভূতুরে বেপার সেপার। মনে মনে চিন্তা করেও কোন উত্তর খুঁজে পেলাম না।
মহিলা ভূত আমার দিকে ফিরে বলল- "তোমাদের পৃথিবীর মানুষ যা যা করো আমরা ভূতরাও তাই তাই করি।" তারপরে ছেলের কান ধরে নিজের কাছে এনে আবার বলা শুরু করলো, "তুমি মনে মনে যাই ভাবোনা কেন আমরা ভুতেরা সব শুনতে পাই। এতো অবাক হওয়ার কিছু নাই। চাইলে আরো অনেক কিছু বলতে পারতাম তোমায় আমাদের সম্পর্কে। কিন্তু জানার অধিকার তোমার নাই। নিজের রাস্তা মাপো।"
এই বলে ছেলের কান ধরে টানতে টানতে ছেলেকে নিয়ে যাচ্ছে। কিছুদূর যাওয়ার পরে লিকলিকে ভূতটা ওর মায়ের হাতে ঝাটকা দিয়ে আমার দিকে দৌড়ে এলো।
- ভাইজান যাইগা। বিদায় নেওয়া হয় নাই।
- হারামজাদা দিলিতো দেরি করাইয়া। আইজ বাসায় ঢুকতে পারুম কিনা কি জানি।
- ভাইজান এইটা রাখেন।
দেখি ভূত আমার দিকে একটা কালো ক্যাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। হাতে নিয়ে একটু নেড়েচেড়ে দেখলাম। খুবই সাধারণ ক্যাপ। আহামরি কিছুই না। ক্যাপ থেকে চোখ সরিয়ে মাথা উচু করে সামনে তাকাতেই দেখি ভূত বা ভূতের মা কেউ নেই। রাস্তাও বদলে গেছে।
একটা মুহুর্ত সময় লাগলো বুঝতে নিজের বাসার নিচেই দাঁড়িয়ে আছি। দাড়োয়ান ডাক দিলো, "স্যার ভিতরে আসেন। দরজা লাগাবো।"
হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১১টা বেজে কুড়ি। হাতে কালো ক্যাপ। পৃথিবীটা হঠাৎ দুলে উঠলো।
By: শাকিল রনি
Facebook : শাকিল রনি
-----------------------
২০০৩ কি চারের ঘটনা। তখন আমি চট্টগ্রাম থাকি। পুরান চান্দগাঁও থানার ওখানে বাসা। কি একটা কাজে চান্দগাঁও আবাসিক গিয়েছিলাম। যখন ফিরছিলাম তখন ঘড়িতে রাত ১১ টা বেজে পনের। হঠাৎ খেয়াল চেপে বসলো আজ হেঁটেই বাসায় যাই। রিক্সা নিলাম না আর। মেইনরোড ধরে না গিয়ে আবাসিকের ভিতর দিয়ে ঘুর পথে যাওয়া শুরু করলাম।
এ ব্লকে মহিলা হোস্টেলের সামনে দিয়ে হেঁটে হেঁটে ১৩ নং রোডে ঢুকে পরলাম। নির্জন রাস্তা। শীতের রাত বলে কুয়াশা ঢাকা। আশে-পাশের বাড়ির বারান্দার লাইটের আলো রাস্তায় এসে উপচে পরে কুয়াশা কে আরো জমিয়ে দিয়েছে। হাঁটছি আপন মনে। কনকনে শীতে বেশ ভালোই লাগছিল হাঁটতে। একটু পর পর সিগারেটে টান দিচ্ছি। হঠাৎ আমার পাশ দিয়ে কি যেনো দ্রুত বেগে চলে গেল। চমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। অস্ফুটস্বরে মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল- "ভূত নাকি?"
এই বলে আবার সামনে - পিছনে তাকালাম। কিছুই দেখতে পেলাম না। বুকে ফুঁ দিয়ে হাঁটা শুরু করবো এমন সময়-ই কে যেনো বলে উঠলো- "হ! ভাইজান। আমি ভূত!"
- কে? কে?
- ভাইজান আমি। একটু সামনে আগায়া আসেন।
দেখি একটু সামনেই রাস্তার পাশের ডাব গাছের নিচে লিকলিকে শরীরে কে একটা যেন দাঁড়িয়ে আছে।
- কে? কে?
- ভাইজান কইলাম-ই তো আমি ভূত।
একটু সাহস নিয়ে সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম। দেখি অসহায় চেহারায় ডাগর ডাগর চোখে লিকলিকে শরীরের চার ফুটের মতো লম্বা একটা ভূত আমার সামনে। মুখে পাইরেটস অব ক্যারিয়ানের জনি ডেপের মতো বিনি করা দাড়ি। পরনে কেবল একটা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। তবে কোমরের মাপে ভুল আছে। পাটের দড়ি কোমড়ে শক্ত করে এঁটে বসে মান ইজ্জৎ টিকিয়ে রেখেছে। জীবনে এই প্রথম ভূত দেখলাম। ভয় লাগলো না একটুও। বরং ভূতটাকে দেখে ওর অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হল। দেখলেই যেন বলতে ইচ্ছে করে- "বাবা খাইছো কিছু।" গায়ের রং হালকা নীলচে।
- কিরে হারামজাদা এখনো লুকাই আছিস ক্যান? সামনে আয়।
- লুকামু আর কই। আমাগো কি আর লুকানোর জায়গা আছে। সবতো আপনাগো ডেভলাপাররা দখল কইরা ফেলছে। কন কি কইবেন?
- আচ্ছা আমি তো শুনছিলাম ভূতেরা নাঁকি সুরে কথা বলে কিন্তু তুই তো দেখি আমাদের মতোই কথা বলিস। ব্যাপার কি রে?
- ভাইজান মাইন্ডে লইয়েন না একটা কথা কই। এই আকামডা করছে আপনেগো সাহিত্যিকেরা। হুদাই আমাগো নামে মিথ্যা অপবাদ দিছে আমরা কিনা নাঁকি সুরে কথা কই। ইচ্ছা করে থাবড়ায়া ওগো...
- হারামজাদা থাম। বাচাল ভূত কোথাকার। এখন বল এমন জোরে দৌড় দিয়া কই যাইতেছিলি? আমারে তো পুরা ভয় লাগাই দিছিলি।
ভূত একটু এগাই এসে দু'হাত দিয়ে প্যান্ট একটু উপরে তুলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আমি আরেকটা সিগারেট ধরালাম।
- ভা-ই-জা-ন আর কইয়েন না। এই যে আবার মনে করায় দিলেন। দেহেন আমার হার্টবিট আবার বাইরা গ্যাছে।
- কি কইলি? তোর আবার হার্টবিট...
- কেন ভাইজান, ভূত বইল্লা কি আমাদের হৃদয় থাকতে পারেনা।
- আচ্ছা থাক বাদ দে। বল কেন দৌড় দিছিলি?
- ভয়ে দৌড় দিছিলাম।
- ভয়! ভূতরাও কি ভয় পায় রে। কিসের ভয়?
- বলা যাবে না। ভূত হইলেও আমারও তো আত্মসম্মানবোধ আছে নাকি।
- হারামজাদা তুই ভালোই পটর পটর করতে পারিস। বললে বল না হলে ভাগ।
- Just cool ভাইজান Just cool কইতাছি। বিড়িটা একটু দিবেন। একটা টান দেই।
- উরে সাংঘাতিক তুই বিড়িও খাইস।
- সব সময় খাইনা ভাইজান। মানুষিক চাপে থাকলে খাই।
- তোর আবার মানুষিক চাপ! কাম সারছে। নে ধর টান দে। এবার কাহিনী বল?
ভূতটা ডাবগাছের নিচে দু'পা ছড়িয়ে বসে গাছে হেলান দিয়ে সিগারেটে একটা লম্বা টান দিলো। এই মুহুর্ত ভূতটাকে দেখে কেমন যেন উদাস উদাস মনে হচ্ছে।
- আমি ভাইজান একটু ঘুরতে বাইর হইছিলাম। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ ছোট বাথরুম পাইলো। আমি কিন্তু ভাই আপনাগো মতো গাছতলা, দেয়াল, খাম্বা পাইলেই ছাইড়া দেই না। টয়লেট ছাড়া আমি পি করতে পারি না।
ভূতের কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। তবে ভূতের কথা শুনে লজ্জায় মাথাটা একটু কাঁটাও গেল।
- তো বাথরুম চাপাইয়া হাঁটতেছি। সামনে দেখি কর্মজীবি মহিলা হোস্টেল। ঢুইক্কা গেলাম ভিতরে। ঝকঝকে কমোড দেইখা পি করলাম। আমি আবার কমোড পরিষ্কার না থাকলে ব্যবহার করি না। তো পি কইরা বাইর হইতে যামু ঠিক ঐ সময় একটা সুন্দর্য কইরা মাইয়্যা টয়লেটে ঢুকার লাইগ্যা দরজাটা খুলতেই আমারে দেইখা ভূত-ভূত-ভূত বইলা যে চিৎকুর ডা দিলো ভাইজান। ঐ মাইয়্যার চিৎকুরের ঠেলায় ভয়ে আমার হার্টবিট এক্কেবারে একশ একশ। জান বাঁচানো ফরজ ভাইজান। জানডা কোন রকমে হাতে লইয়া আইজও দৌড় কাইলও দৌড়। তারপরেই তো আপনার লগে দেখা।
- বিলাইর হাড্ডি তুই পেশাব করার জন্য মহিলা হোস্টেলে গেছিস। তোর...
- ভাইজান থামেন। জানি কি কইবেন। আমার মা বইন আছে কি-না জিগাইবেন তো। আছে সবাই আছে। আমাগো মা বইন অনেক ভদ্র। শিষ্টাচার জানে। আপনাগো মা বইনের মতো রাত বিরাতে অতিথি মেহমান দেইখা চিল্লায়া কানের পর্দা ফাটায় দেয় না। হার্টবিট বাড়ায় দেয় না।
- হারামজাদা তুই অতিথি হইয়্যা মহিলা হোস্টেলে গেছিলি।
ভূত হঠাৎ সিগারেট ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ভয়ে পানসে হয়ে গেছে মুখ। তাকিয়ে আছে অপলক আমার পাশে। আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকাতেই দেখি এক মহিলা ভূত কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বলে দিতে হলোনা চেহারা দেখেই বুঝতে পারছি এইটা ভূতের মা। মা ছেলের কি মিল।
মহিলা ভূত ছেলের দিকে এগিয়ে গিয়ে কানের নিচে বিরাশি সিক্কার এক চড় কষালো। লিকলিকে ভূতটা ডাব গাছের সাথে সজোরে বারি খেয়ে স্প্রিং এর মতো দুলতে দুলতে সোজা হয়ে গেল।
- হারামজাদা তোরে পুরা আবাসিক খুঁজতাছি তুই এইখানে এই বদের মানুষের সাথে বিড়ি টানিস। তোর বিড়ি খাওয়া ছুটাইতেছি।
মহিলা ভূতের চিৎকারে আমার কানে তালা লেগে যাওয়ার যোগার। অস্ফুটস্বরে বললাম- "শিষ্টাচার হ্যাঁ শিষ্টাচার। "
আমার কথা শুনে লিকলিকে ভূতের চোয়াল ঝুলে গেল। ওর মায়ের দিকে রাগ এবং অভিমানি দৃষ্টিতে তাকালো। যেন বলতে চাইছে- "দিলা তো ইজ্জতের চল্লিশা কইরা।"
- আইজ তোর বাপে আসুক তোরে মহিলা হোস্টেলের পাশে ঘুরঘুর করা ছুটামু। কাইল তোর IELTS পরীক্ষা আর তুই ঘুরঘুর করিস।
- মাম্মি, পড়তে পড়তে মাথা হ্যাং করছে বইলাই তো ঘুরতে বাইর হইছি।
- লন্ডনে কোন ভার্সিটিতে যদি চাঞ্চ না পাইস তোরে রিক্সা কিন্না দিমু।
মা ছেলের কথা শুনে পুরো তাজ্জব হয়ে যাচ্ছি। কি বলছে এরা। ভূতরা কি পড়ালেখা করে। তাও আবার লন্ডনে পড়তে যাওয়ার জন্য IELTS ও দেয়। কি বলে এইসব। পুরাই ভূতুরে বেপার সেপার। মনে মনে চিন্তা করেও কোন উত্তর খুঁজে পেলাম না।
মহিলা ভূত আমার দিকে ফিরে বলল- "তোমাদের পৃথিবীর মানুষ যা যা করো আমরা ভূতরাও তাই তাই করি।" তারপরে ছেলের কান ধরে নিজের কাছে এনে আবার বলা শুরু করলো, "তুমি মনে মনে যাই ভাবোনা কেন আমরা ভুতেরা সব শুনতে পাই। এতো অবাক হওয়ার কিছু নাই। চাইলে আরো অনেক কিছু বলতে পারতাম তোমায় আমাদের সম্পর্কে। কিন্তু জানার অধিকার তোমার নাই। নিজের রাস্তা মাপো।"
এই বলে ছেলের কান ধরে টানতে টানতে ছেলেকে নিয়ে যাচ্ছে। কিছুদূর যাওয়ার পরে লিকলিকে ভূতটা ওর মায়ের হাতে ঝাটকা দিয়ে আমার দিকে দৌড়ে এলো।
- ভাইজান যাইগা। বিদায় নেওয়া হয় নাই।
- হারামজাদা দিলিতো দেরি করাইয়া। আইজ বাসায় ঢুকতে পারুম কিনা কি জানি।
- ভাইজান এইটা রাখেন।
দেখি ভূত আমার দিকে একটা কালো ক্যাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। হাতে নিয়ে একটু নেড়েচেড়ে দেখলাম। খুবই সাধারণ ক্যাপ। আহামরি কিছুই না। ক্যাপ থেকে চোখ সরিয়ে মাথা উচু করে সামনে তাকাতেই দেখি ভূত বা ভূতের মা কেউ নেই। রাস্তাও বদলে গেছে।
একটা মুহুর্ত সময় লাগলো বুঝতে নিজের বাসার নিচেই দাঁড়িয়ে আছি। দাড়োয়ান ডাক দিলো, "স্যার ভিতরে আসেন। দরজা লাগাবো।"
হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১১টা বেজে কুড়ি। হাতে কালো ক্যাপ। পৃথিবীটা হঠাৎ দুলে উঠলো।
By: শাকিল রনি
Facebook : শাকিল রনি
আমরা লেখক -G_Fahim- | Give your writings to this page. This is our official facebook page
No comments:
Post a Comment